শনিবার, ১৬ জুন, ২০১২

সুযোগ এখন প্রধানমন্ত্রীর করতলে



ড. মা হ্ বু ব উ ল্লা হ্
গত ২ জুন দৈনিক আমার দেশ-এ ‘নগরে আগুন লাগলে দেবালয় কি রক্ষা পায়’ শিরোনামের কলামটি ছাপা হয়েছিল। এই লেখার সর্বশেষ লাইনটি ছিল, ‘তবে এটুকু বুঝতে পারছি, ১৯৭১-এর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যা কিছু চত্বফরপঃ করতে পেরেছি, এখন সেরকম কিছু করতে পারা প্রায় অসম্ভব।’ আমরা যে একটা অনিশ্চিত সময় পার করছি, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। অর্থনীতি শাস্ত্রে একটি কথা আছে—ঝুঁকি সম্পর্কে চত্ড়নধনরষরঃু বা সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে হিসাব কষে কিছু বলা যায়, কিন্তু অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সেরকম কিছু বলা যায় না। তাই অনিশ্চয়তা একেবারেই পরিমাপযোগ্য নয়।
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে সর্বশেষ পরিণতি কীভাবে আসতে পারে সে সম্পর্কে জোরালোভাবে আঁচ-অনুমান করা সহজতর ছিল। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি এতই জটিল যে এই পরিস্থিতির গর্ভ থেকে কেমন সন্তানের জন্ম হবে, সে সম্পর্কে ধারণা করা অত্যন্ত কঠিন। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গুনার মির্ডালের ভাষায় একটি ঝড়ভঃ ংঃধঃব বা কোমল রাষ্ট্র বলা যায়। এরকম একটি রাষ্ট্রে দেশের ভেতরের এবং বাইরের অনেক ধরনের কুশীলবরা তত্পর থাকে। তাদের বহুমুখী তত্পরতা শেষ পর্যন্ত দেশটিকে কোন গন্তব্যে নিয়ে যাবে, তা বলার মতো বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা আমার আছে বলে মনে হয় না। কারণ কোনো একজন অপঃড়ত্ কিছু একটা করতে চাইলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অপঃড়ত্ বা অপঃড়ত্-রা উল্টো চাল চালে। এর ফলে অবিরত ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটতে থাকে। শেষ ফল যা আসে তা হয়তো এসব অগণিত ক্রিয়া-বিক্রিয়ারই একটি পরিণতি। কিন্তু ক্রিয়া-বিক্রিয়াগুলোর প্রতিটি ধাপ বা পর্যায় চয়ন করে চূড়ান্ত ফলাফল সম্পর্কে বলা সত্যিই কঠিন। কারণ বিষয়টি ঈযবসরংঃত্ু বা রসায়ন শাস্ত্র নয়, যেখানে সমাজবদ্ধ মানুষের মনে নিরন্তর নানামুখী প্রবণতার সৃষ্টি হয় এবং তারই সমান্তরালে রাষ্ট্রবহির্ভূত অপঃড়ত্-রাও নানামুখী প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়, সেখানে রসায়ন শাস্ত্রের মতো কোনো সিদ্ধান্তে আসা সত্যিই দুরূহ।
অস্বীকার করার উপায় নেই বাংলাদেশ এই মুহূর্তে তিনটি বৃহত্ শক্তির স্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। শক্তিগুলো হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং গণচীন। এছাড়াও রয়েছে আরও কিছু কম গুরুত্বপূর্ণ বহিঃশক্তি, যেমন—সৌদি আরব, পাকিস্তান এবং মিয়ানমার। বিশ্বজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণকারী রাষ্ট্রের সংখ্যা কম নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর মতো সামরিক জোট তো রয়েছেই। অন্যদিকে ভারত ও চীন দুটি উদীয়মান শক্তি। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রয়েছে বিশাল অভিন্ন সীমান্ত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করে ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। ভারতকে নিয়ে এদেশের মানুষের উদ্বেগের পরিমাণও কম নয়। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে আস্থার সঙ্কট। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারতের জন্য রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থের বিচারে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত সমস্যার তালিকাটিও দীর্ঘ। এতকিছুর পরও বাংলাদেশ সরাসরি ভারতের বৈরিতার ব্যয় বহনে সক্ষম নয়, কারণ ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বন্ধু নির্বাচন করা গেলেও প্রতিবেশী নির্বাচন করা যায় না, এটি এক নিষ্ঠুর সত্য। গণচীন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেকে একটি শক্তিশালী খেলোয়াড় রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। গণচীন এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। গণচীনের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও হিসাবের মধ্যে নিতে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বাস্তবতাকে অবহেলা করতে পারে না। গণচীন ভারতের মতো বাংলাদেশের সীমান্ত সন্নিবিষ্ট রাষ্ট্র না হলেও এর ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের খুবই কাছাকাছি।
বাংলাদেশের সঙ্গে গণচীনের স্বাভাবিক বাণিজ্যিক লেনদেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৭৫-এ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উত্তরোত্তর ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তবে কখনও কখনও যে টানাপড়েনের ঘটনা ঘটেনি, এমনটি বলা যাবে না। গণচীনের Department of Policy Planning, Ministry of Foreign Affairs থেকে প্রকাশিত China’s Foreign Affairs-2011 গ্রন্থের বাংলাদেশ অধ্যায়ে লেখা হয়েছে, Military-to-military exchanges and cooperation produced tangible outcome. গণচীন এখন বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম উড়াল রেলসড়ক নির্মাণে আগ্রহী। এ দুটি অবকাঠামোগত স্থাপনা নির্মাণে যদি বাংলাদেশ ও চীন সরকার সম্মত হতে পারে তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উজ্জ্বলতর হবে। শীতল যুদ্ধের সময় আটলান্টিক মহাসাগর ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রণনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। ভারত মহাসাগর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে আটলান্টিকের চেয়েও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরেরই অংশ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বাংলাদেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ভারত এখনও ভারত মহাসাগরকে ইন্ডিয়ান লেক হিসেবেই দেখতে চায়। ভারতের আশঙ্কা, গণচীন পাকিস্তানের গুরাদর এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে এবং বাংলাদেশেও আরেকটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উত্সাহ প্রকাশ করে ভারতকে জরহম ড়ভ চবধত্ষ দিয়ে আবদ্ধ করে ফেলতে চাইছে। গণচীনেরও আশঙ্কা, তার উচ্চ অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য জ্বালানি তেলের সরবরাহ ভারত মহাসাগর দিয়ে অব্যাহত রাখা ভবিষ্যতে নানামুখী সামরিক বাধার সম্মুখীন হতে পারে। এজন্যই গণচীন তার জাতীয় স্বার্থে জ্বালানি তেল সরবরাহ ঝুঁকির মুখে ফেলতে চায় না। এভাবে বিভিন্ন শক্তির স্বার্থ ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিবেচনায় নিলে আমাদের বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে, আমরা এখন বিপরীতমুখী স্বার্থের দ্বন্দ্বের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। এই অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে কারও শত্রুতার মুখোমুখি না হয়ে নীতিনির্ধারণ করা সত্যিই কঠিন। আমাদের অনুসৃত পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য হচ্ছে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি একসময় বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ডে পরিণত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন। এখন দেখার বিষয় তদীয় দুহিতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার প্রত্যয়কে সমুন্নত রাখতে কী পদক্ষেপ নেন। তবে তার সরকার যে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষিতে দৃঢ়তা দেখাতে পারেনি, তা একরকম বলা যায়।
বাংলাদেশকে নিয়ে আগ্রহী বহিঃশক্তিগুলোর পারস্পরিক অবস্থান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং ঘটনাপ্রবাহের ওপর উল্লেখযোগ্য ছাপ ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। জ্যামিতি শাস্ত্রে আছে, ত্রিভুজের দুটি বাহুর যোগফল তৃতীয় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর। যে ৩টি প্রধান বহিঃশক্তির কথা আলোচনা করা হলো সেগুলোর দুটির মধ্যে যদি কোনো বোঝাপড়া হয় তাহলে হয়তো বাংলাদেশকে সেই পথেই এগুতে হবে। কারণ বাংলাদেশে এখনও এমন কোনো জনঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তির অভ্যুদয় ঘটেনি যে শক্তি এ ধরনের বোঝাপড়াকে আমলে না নিয়ে শুধু স্বদেশের স্বার্থের কথা ভেবে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে। এটা আমাদের জাতীয় দুর্বলতা। অতি সম্প্রতি ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ‘বাংলাদেশ : ব্যাক টু দ্য ফিউচার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রত্যাশায় ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জনগণ বিপুল উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু দলটি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের গতানুগতিক ধারায় ফিরে যায় এবং দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এ কারণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা বাতিল হয়ে যায়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়ায় দেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশটির রাজপথে সহিংস বিক্ষোভ অব্যাহত থাকতে পারে। ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা সিডনি জোনস বলেন, সমঝোতার সামান্য সুযোগ এখনও রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বিরোধী দলের কাছাকাছি পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের রাজনীতি আবারও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচনে একচ্ছত্র জয় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলটিকে নিয়ে দেশের জনগণের মোহ গত ৩ বছরেই কেটে গেছে। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দেয় এবং বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সংবাদ মাধ্যম, নিরাপত্তাবাহিনী ও বিচার বিভাগের ওপর সরকার বিভিন্নভাবে হস্তক্ষেপ করে। আগামী নির্বাচন নিয়ে যে কোনো ধরনের অচলাবস্থার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর রাজধানীতে সহিংসতা চলতে থাকলে পূর্ণমাত্রায় সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা না থাকলেও সামরিক হস্তক্ষেপ জনসমর্থন পেতে পারে। ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক পল কিন জজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার সুযোগ একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। তবে এজন্য রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএনপির আটক নেতাদের মুক্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উদ্যোগের সূচনা করতে পারেন। অন্যথায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র আবারও সেই হুমকির মধ্যে পড়বে।
এই কলাম যখন লিখছিলাম তখনই সংবাদ পেলাম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য কয়েকজন নেতা জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বিএনপি সহিংসতাকে এড়াতে চায় বলেই সরকারকে গত ১১ জুন আরও সময় দিয়েছে। এখন সমঝোতায় পৌঁছানোর সুবর্ণ সুযোগটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করতলে অবস্থান করছে। আশা করি তিনি এই সুযোগ হাতছাড়া না করে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের অশুভ আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করবেন। তার জন্যই সেই মহান উক্তিটি স্মরণ করি : চবধপব যধঃয যবত্ ারপঃড়ত্রবং সড়ত্ব মষড়ত্রড়ঁং ঃযধহ ঃযধঃ ড়ভ ধিত্.
লেখক : অর্থনীতিবিদ
mail: mahbub.ullah@yahoo.com

শুক্রবার, ১ জুন, ২০১২

নগরে আগুন লাগলে দেবালয় কি রক্ষা পায়


ড. মাহ্বুবউল্লাহ্
আমার পেশা শিক্ষকতা। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস-পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট এবং পরামর্শ দানের কাজে আমাকে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে আমার বৃত্তবহির্ভূত মানুষজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা কিংবা মতবিনিময়ের সুযোগ খুব কমই থাকে। এসব ব্যস্ততার ফাঁকে যাদের সঙ্গেই আমার সাক্ষাত্ ঘটে, তাদের প্রত্যেকেরই একটি জিজ্ঞাসা—দেশে কী ঘটতে যাচ্ছে। পরিস্থিতির মধ্যে অনিশ্চয়তার উপাদানগুলো এতই ব্যাপক যে আমার পক্ষে বলা সম্ভব হয়ে ওঠে না, কী ঘটতে পারে। আমরা সবাই জানি, কালপ্রবাহে ভবিষ্যত্ অনিশ্চয়তায় ভরপুর। অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও চত্বফরপঃরড়হ ঝপরবহপব-এর বদৌলতে ভবিষ্যত্ সম্পর্কে অনেকাংশে ঐরময চত্ড়নধনরষরঃু বা উচ্চ সম্ভাবনা নিয়ে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। ১৯৭০-৭১ সালে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার কর্মসূচি উত্থাপনের অপরাধে সামরিক আদালতের দণ্ড মাথায় নিয়ে আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারুদ্ধ ছিলাম। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের গণহত্যার সূচনায় পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বাইরের ঘটনাবলীর সঙ্গে আমার কিংবা আমার সহবন্দীদের কারোরই যোগাযোগ ছিল না। তবে রাজবন্দী হিসেবে কিছু সংবাদপত্র পাঠ করার স্বাধীনতা আমাদের ছিল। সেসব সংবাদপত্রেরও যেসব খবর আপত্তিকর মনে হতো সেগুলো কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের গোচরে না আসা নিশ্চিত করার জন্য কালো কালি দিয়ে লেপ্টে দিত। এসব সেন্সর করা খবরের বেশিরভাগই ছিল বন্দী সংক্রান্ত বিষয়াবলী। রাজনৈতিক খবরগুলো সেন্সরের আওতায় আনা হতো না। আমরা অবরুদ্ধ পূর্ব বাংলার কয়েকটি দৈনিক পেতাম। যেমন—দৈনিক আজাদ, পাকিস্তান অবজারভার এবং পুড়িয়ে দেয়ার পর আবার প্রকাশনার মুখ দেখতে পাওয়া দৈনিক ইত্তেফাক। এছাড়াও ছিল দৈনিক পাকিস্তান। পুরো মুক্তিযুদ্ধকালীন আবিদুর রহমানের মালিকানাধীন দ্য পিপল এবং দৈনিক সংবাদ আদৌ প্রকাশিত হতে পারেনি। এছাড়া বোনাস হিসেবে পেতাম পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত দ্য ডন এবং পাকিস্তান টাইমস। অবরুদ্ধ পূর্ব বাংলায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোর তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো কিছুটা হলেও বেশি স্বাধীনতা ভোগ করত। তবে একথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, সেই সংবাদপত্রগুলোও সেন্সরের খড়গমুক্ত ছিল না। কারণ ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যাতে পশ্চিম পাকিস্তানি জনগণ কোনোক্রমেই পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্মম নিপীড়নের কথা জানতে না পারে। সরকারের প্রচারণার একটিমাত্র লক্ষ্য ছিল, তা হলো পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের ইন্ধনে মুষ্টিমেয় কিছু লোক দেশদ্রোহিতামূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা সংবাদপত্র পাঠ করে জানতে পারছিলাম অবরুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কী প্রতিক্রিয়া ঘটছে। এছাড়া ভারতে আশ্রয় নেয়া পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের নিয়ে জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতাদের উদ্বেগ প্রকাশ থেকেও আমরা বুঝতে পারছিলাম, শুধু প্রাণরক্ষার তাগিদে লাখ লাখ লোক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা আরও জানতে পেরেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অবস্থান কী, জানতে পেরেছিলাম জাতিসংঘকেন্দ্রিক কূটনৈতিক তত্পরতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন সরকারের সঙ্গে সে দেশের সুধী সমাজ, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ জনগণের মতপার্থক্যের বিষয়গুলো।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তখন একজন ডেপুটি জেলার ছিলেন। তার নাম সামশুর রাহমান। তিনি হয়তো আজ আর বেঁচে নেই। আপাদমস্তক ভদ্রলোক এই মানুষটির রাজবন্দীদের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার সুনাম ছিল। ১৯৭১-এর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আমাকে একদিন একান্তে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দেশে কী হতে যাচ্ছে’। আমার প্রতি তার এক ধরনের স্নেহ ও ভালোবাসা ছিল। জানি না কী কী করে তার মধ্যে একটি বিশ্বাস দানা বেঁধেছিল যে, বয়সে অতি তরুণ এই বন্দীটি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দিক থেকে প্রখর চেতনাসম্পন্ন। সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে আমি নিজের মধ্যে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে একটি ধারণা গড়ে তুলতে সক্ষম হই। এছাড়াও পূর্ব পাকিস্তানি সংবাদপত্রগুলোতে ‘দুষ্কৃতকারী’দের সঙ্গে সামরিক বা আধা-সামরিক বাহিনীর গোলাগুলি বিনিময় বা সংঘর্ষের খবরও বেরুত। কখনও কখনও কতজন ‘দুষ্কতৃকারী’ নিহত হয়েছে কিংবা ধরা পড়েছে, সে খবরও বেরুত। জেলে বাঙালি ওয়ার্ডেনরাও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকশন সম্পর্কে খবরাখবর দিত। এক সময় শুনতে পেলাম, তরুণ বাঙালিদের জোর করে ধরে নিয়ে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নিয়ে নেয়া হতো। এতে বুঝতে পারলাম, আহত পাকিস্তানি সৈন্যদের দেহে রক্ত সরবরাহের জন্যই এই ঘৃণ্য কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে। এই অভিযানে অনেক বাঙালি নাগরিককে প্রাণ হারাতে হতো। ধৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কাউকে কাউকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হতো, তারাও একান-ওকানে ভর করে সামরিক নির্যাতনের কুঠুরির দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা আমাদের কানে পৌঁছে দিত। এসব খবর ছাড়াও একটি উদ্বেগজনক খবর আমার মতো রাজবন্দীদের অত্যন্ত বিচলিত করেছিল। সেটা হলো, বাম ঘরানার মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর মুজিব বাহিনীর নিধন অভিযান। আমরা আশা করেছিলাম, সব দল ও মতের মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমির মুক্তির জন্য একাট্টা হয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়বে। বুঝতে পারলাম, মুক্তিযুদ্ধের ভেতরেও একটা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছে। এসব ছন্দপতন সত্ত্বেও বুঝতে বাকি রইল না, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।।
ডেপুটি জেলার সামশুর রহমান সাহেবের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যমান পরিস্থিতির নিরিখে আমার জবাব ছিল, ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর মধ্যে ভারতীয় সামরিক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে আত্মসমর্পণে বাধ্য করবে। তারপর আমরা কতটুকু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব, সে সম্পর্কে তখনই কিছু বলতে চাইনি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর পর বাংলাদেশের ৪১ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষ কতটুকু স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করেছে, সেটা এ দেশের জনগণ বিলক্ষণ জানে ও বোঝে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের পর জেলার থেকে শুরু করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের সব কর্মকর্তা রাজবন্দীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ছুটে এলেন। জলযোগের জন্য নিয়ে এলেন কয়েক প্যাকেট মিষ্টি। এতদিন তারা পূর্ণ আনুগত্যের সঙ্গেই পাকিস্তানি সামরিক সরকারের হুকুম তামিল করেছেন। সামশুর রহমান সাহেব আমাকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কী করে প্রায় নির্ভুলভাবে পাকিস্তানিদের পরাজয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছেন? আপনার মধ্যে কি কোনো ধরনের আধ্যাত্মিক শক্তি কাজ করে? আমার সাফ জবাব ছিল—এসব বোঝার জন্য পীর, ফকির কিংবা জ্যোতিষী হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু একটি ক্ষমতা। সেটি হলো রাজনৈতিক সমীকরণগুলো মেলাতে পারার সক্ষমতা। কিন্তু আজ বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে সেই আমি কোনো সমীকরণই যেন মেলাতে পারছি না। যতই দিন যাচ্ছে, সরকারের মেয়াদ ততই ফুরিয়ে আসছে। মেয়াদ শেষ হলে বর্তমান সরকারের পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সাংবিধানিক কারণেই সম্ভব হবে না। কিন্তু পলিটিক্যাল পাওয়ারের ট্রানজিশনটি কীভাবে ঘটবে তা নিয়ে চলছে চরম অচলাবস্থা। বিরোধী দল জানিয়ে দিয়েছে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন করবে না, নির্বাচন হতে দেবে না। অপরদিকে সরকারি দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাফ কথা, কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। এই দুই বিপরীত মেরুমুখী অবস্থানের সমাধান কী? বাংলাদেশের বিদেশি বন্ধুদের মুখ থেকে যে কথাটি উচ্চারিত হচ্ছে তা হলো. নির্বাচনটি হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য, ন্যায্য এবং সব পক্ষের অংশগ্রহণমূলক। তারা খোলাখুলি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলেনি। তাদের কূটনৈতিক ভাষায় চয়নকৃত বাক্যাবলীর অর্থভেদ করলে যা বোঝা যায় সেটি হলো, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন। এমনকি ভারতের অর্থমন্ত্রী শ্রী প্রণব মুখার্জিও বলেছেন, গণতন্ত্রের মূল স্পিরিট হলো দেশের জনগণ যেভাবে চায় সে পথেই চলা। মোটামুটিভাবে বলা যায়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি এখন আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। এরকম একটি প্রায় অনিষ্পন্নযোগ্য দ্বন্দ্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর একটি বিধান। এই বিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংসদের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার ৩ মাস আগে। অর্থাত্ বিদ্যমান সংসদের সদস্যরা সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন। এর ফলে একদিকে যেমন তারা নির্বাচনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশী একই দলের সংসদ সদস্য এবং অসদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দেবে। দেখা দেবে বিশাল বিশৃঙ্খলা। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে ফয়সালায় আসার জন্য ৩ মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। ১০ জুন সেই সময়সীমা অতিক্রান্ত হবে। এরই মধ্যে তার দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা কারারুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আপস সমঝোতা হতে হলে দমন-পীড়নমূলক অবস্থার ইতি ঘটিয়ে একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু তারও কোনো লক্ষণ নেই। সরকারের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, কূটনীতির ভাষায় যাকে বলা হয় Brinkmanship, সে পথই সরকার বেছে নিয়েছে। পুরো ব্যাপারটি উভয় পক্ষের জন্য একটি স্নায়ুশক্তির পরীক্ষার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করার এই নীতি দেশের জন্য যে মঙ্গলজনক নয়, তা বলাই বাহুল্য। এরই মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে বসেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে যদি চ্যালেঞ্জ-কাউন্টার চ্যালেঞ্জ চলতে থাকে এবং তার পাশাপাশি যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে তাহলে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তা থেকে কোনো পক্ষেরই রেহাই পাওয়া সহজ হবে না। কথায় বলে, নগরে যদি আগুন লাগে তাহলে দেবালয় কি রক্ষা পায়? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাহেব বলেছেন, সংলাপ না হলে যুদ্ধ হবে। তিনি হয়তো সংলাপের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই এই উক্তিটি করেছেন। আমাদের সোনার দেশে ভালোমন্দ মিশিয়ে গত ৪১ বছরে যা কিছু অর্জন, সেটা তো আমরা যুদ্ধের আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাই হতে দিতে পারি না। মানুষ যে প্রশ্ন করছে দেশে কী হবে, সেই উত্কণ্ঠার অবসান এক নিমিষেই হয়ে যেতে পারে সংলাপ শুরু হলে। রাজনীতিতে যারা ক্ষমতাবান, যাদের হাতে ক্ষমতার চাবিকাঠি তারা যদি একটু ছাড় দিয়েই সংলাপের পথ সুগম করতে পারেন, তাহলে তারা হেরে গেছেন এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। গণতান্ত্রিক দেশে বেশিরভাগ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো গৌরবের, অগৌরবের নয়। ১৯৯৬ সালে বিএনপিও সংবিধানের অজুহাত দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে চায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদ বাতিল করে একটি নির্বাচন দিয়ে একতরফাভাবে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি পাস করেছিল বলেই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ১১৬টি আসন পেয়ে বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে অবতীর্ণ হতে পেরেছিল। কোয়ালিশন গঠনের খেলায় হেরে না গেলে তাদের পক্ষে সরকার গঠন অসম্ভব কিছু হতো না। আজ এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তা দেখে মনে হয়, শাসক আওয়ামী লীগ দলের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। একটি পথ হলো ধনুর্ভঙ্গপণ করে বিরোধী দলের দাবিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা অথবা আপসরফায় পৌঁছে নিজেদের জন্য ইতিহাসে একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করা। এখন তারা কী করবে এটা তাদেরই বিবেচনার বিষয়। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, ১৯৭১-এর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যা কিছু Predict করতে পেরেছি, এখন সেরকম কিছু করতে পারা প্রায় অসম্ভব।
লেখক : অর্থনীতিবিদ
mahbub.ullah@yahoo.com