শুক্রবার, ১ জুন, ২০১২

নগরে আগুন লাগলে দেবালয় কি রক্ষা পায়


ড. মাহ্বুবউল্লাহ্
আমার পেশা শিক্ষকতা। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস-পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট এবং পরামর্শ দানের কাজে আমাকে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে আমার বৃত্তবহির্ভূত মানুষজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা কিংবা মতবিনিময়ের সুযোগ খুব কমই থাকে। এসব ব্যস্ততার ফাঁকে যাদের সঙ্গেই আমার সাক্ষাত্ ঘটে, তাদের প্রত্যেকেরই একটি জিজ্ঞাসা—দেশে কী ঘটতে যাচ্ছে। পরিস্থিতির মধ্যে অনিশ্চয়তার উপাদানগুলো এতই ব্যাপক যে আমার পক্ষে বলা সম্ভব হয়ে ওঠে না, কী ঘটতে পারে। আমরা সবাই জানি, কালপ্রবাহে ভবিষ্যত্ অনিশ্চয়তায় ভরপুর। অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও চত্বফরপঃরড়হ ঝপরবহপব-এর বদৌলতে ভবিষ্যত্ সম্পর্কে অনেকাংশে ঐরময চত্ড়নধনরষরঃু বা উচ্চ সম্ভাবনা নিয়ে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। ১৯৭০-৭১ সালে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ববাংলার কর্মসূচি উত্থাপনের অপরাধে সামরিক আদালতের দণ্ড মাথায় নিয়ে আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারুদ্ধ ছিলাম। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের গণহত্যার সূচনায় পর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বাইরের ঘটনাবলীর সঙ্গে আমার কিংবা আমার সহবন্দীদের কারোরই যোগাযোগ ছিল না। তবে রাজবন্দী হিসেবে কিছু সংবাদপত্র পাঠ করার স্বাধীনতা আমাদের ছিল। সেসব সংবাদপত্রেরও যেসব খবর আপত্তিকর মনে হতো সেগুলো কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের গোচরে না আসা নিশ্চিত করার জন্য কালো কালি দিয়ে লেপ্টে দিত। এসব সেন্সর করা খবরের বেশিরভাগই ছিল বন্দী সংক্রান্ত বিষয়াবলী। রাজনৈতিক খবরগুলো সেন্সরের আওতায় আনা হতো না। আমরা অবরুদ্ধ পূর্ব বাংলার কয়েকটি দৈনিক পেতাম। যেমন—দৈনিক আজাদ, পাকিস্তান অবজারভার এবং পুড়িয়ে দেয়ার পর আবার প্রকাশনার মুখ দেখতে পাওয়া দৈনিক ইত্তেফাক। এছাড়াও ছিল দৈনিক পাকিস্তান। পুরো মুক্তিযুদ্ধকালীন আবিদুর রহমানের মালিকানাধীন দ্য পিপল এবং দৈনিক সংবাদ আদৌ প্রকাশিত হতে পারেনি। এছাড়া বোনাস হিসেবে পেতাম পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত দ্য ডন এবং পাকিস্তান টাইমস। অবরুদ্ধ পূর্ব বাংলায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোর তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো কিছুটা হলেও বেশি স্বাধীনতা ভোগ করত। তবে একথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, সেই সংবাদপত্রগুলোও সেন্সরের খড়গমুক্ত ছিল না। কারণ ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিল যাতে পশ্চিম পাকিস্তানি জনগণ কোনোক্রমেই পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্মম নিপীড়নের কথা জানতে না পারে। সরকারের প্রচারণার একটিমাত্র লক্ষ্য ছিল, তা হলো পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের ইন্ধনে মুষ্টিমেয় কিছু লোক দেশদ্রোহিতামূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা সংবাদপত্র পাঠ করে জানতে পারছিলাম অবরুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কী প্রতিক্রিয়া ঘটছে। এছাড়া ভারতে আশ্রয় নেয়া পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের নিয়ে জাতিসংঘ ও বিশ্ব নেতাদের উদ্বেগ প্রকাশ থেকেও আমরা বুঝতে পারছিলাম, শুধু প্রাণরক্ষার তাগিদে লাখ লাখ লোক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা আরও জানতে পেরেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অবস্থান কী, জানতে পেরেছিলাম জাতিসংঘকেন্দ্রিক কূটনৈতিক তত্পরতা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন সরকারের সঙ্গে সে দেশের সুধী সমাজ, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ জনগণের মতপার্থক্যের বিষয়গুলো।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তখন একজন ডেপুটি জেলার ছিলেন। তার নাম সামশুর রাহমান। তিনি হয়তো আজ আর বেঁচে নেই। আপাদমস্তক ভদ্রলোক এই মানুষটির রাজবন্দীদের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার সুনাম ছিল। ১৯৭১-এর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি আমাকে একদিন একান্তে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দেশে কী হতে যাচ্ছে’। আমার প্রতি তার এক ধরনের স্নেহ ও ভালোবাসা ছিল। জানি না কী কী করে তার মধ্যে একটি বিশ্বাস দানা বেঁধেছিল যে, বয়সে অতি তরুণ এই বন্দীটি রাজনৈতিক প্রজ্ঞার দিক থেকে প্রখর চেতনাসম্পন্ন। সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে আমি নিজের মধ্যে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যত্ সম্পর্কে একটি ধারণা গড়ে তুলতে সক্ষম হই। এছাড়াও পূর্ব পাকিস্তানি সংবাদপত্রগুলোতে ‘দুষ্কৃতকারী’দের সঙ্গে সামরিক বা আধা-সামরিক বাহিনীর গোলাগুলি বিনিময় বা সংঘর্ষের খবরও বেরুত। কখনও কখনও কতজন ‘দুষ্কতৃকারী’ নিহত হয়েছে কিংবা ধরা পড়েছে, সে খবরও বেরুত। জেলে বাঙালি ওয়ার্ডেনরাও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকশন সম্পর্কে খবরাখবর দিত। এক সময় শুনতে পেলাম, তরুণ বাঙালিদের জোর করে ধরে নিয়ে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত নিয়ে নেয়া হতো। এতে বুঝতে পারলাম, আহত পাকিস্তানি সৈন্যদের দেহে রক্ত সরবরাহের জন্যই এই ঘৃণ্য কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে। এই অভিযানে অনেক বাঙালি নাগরিককে প্রাণ হারাতে হতো। ধৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কাউকে কাউকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হতো, তারাও একান-ওকানে ভর করে সামরিক নির্যাতনের কুঠুরির দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা আমাদের কানে পৌঁছে দিত। এসব খবর ছাড়াও একটি উদ্বেগজনক খবর আমার মতো রাজবন্দীদের অত্যন্ত বিচলিত করেছিল। সেটা হলো, বাম ঘরানার মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর মুজিব বাহিনীর নিধন অভিযান। আমরা আশা করেছিলাম, সব দল ও মতের মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমির মুক্তির জন্য একাট্টা হয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়বে। বুঝতে পারলাম, মুক্তিযুদ্ধের ভেতরেও একটা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছে। এসব ছন্দপতন সত্ত্বেও বুঝতে বাকি রইল না, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।।
ডেপুটি জেলার সামশুর রহমান সাহেবের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যমান পরিস্থিতির নিরিখে আমার জবাব ছিল, ২০ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর মধ্যে ভারতীয় সামরিক বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে আত্মসমর্পণে বাধ্য করবে। তারপর আমরা কতটুকু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব, সে সম্পর্কে তখনই কিছু বলতে চাইনি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর পর বাংলাদেশের ৪১ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষ কতটুকু স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করেছে, সেটা এ দেশের জনগণ বিলক্ষণ জানে ও বোঝে। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের পর জেলার থেকে শুরু করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলের সব কর্মকর্তা রাজবন্দীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ছুটে এলেন। জলযোগের জন্য নিয়ে এলেন কয়েক প্যাকেট মিষ্টি। এতদিন তারা পূর্ণ আনুগত্যের সঙ্গেই পাকিস্তানি সামরিক সরকারের হুকুম তামিল করেছেন। সামশুর রহমান সাহেব আমাকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে আবারও জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কী করে প্রায় নির্ভুলভাবে পাকিস্তানিদের পরাজয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছেন? আপনার মধ্যে কি কোনো ধরনের আধ্যাত্মিক শক্তি কাজ করে? আমার সাফ জবাব ছিল—এসব বোঝার জন্য পীর, ফকির কিংবা জ্যোতিষী হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু একটি ক্ষমতা। সেটি হলো রাজনৈতিক সমীকরণগুলো মেলাতে পারার সক্ষমতা। কিন্তু আজ বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে সেই আমি কোনো সমীকরণই যেন মেলাতে পারছি না। যতই দিন যাচ্ছে, সরকারের মেয়াদ ততই ফুরিয়ে আসছে। মেয়াদ শেষ হলে বর্তমান সরকারের পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সাংবিধানিক কারণেই সম্ভব হবে না। কিন্তু পলিটিক্যাল পাওয়ারের ট্রানজিশনটি কীভাবে ঘটবে তা নিয়ে চলছে চরম অচলাবস্থা। বিরোধী দল জানিয়ে দিয়েছে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন করবে না, নির্বাচন হতে দেবে না। অপরদিকে সরকারি দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাফ কথা, কোনো অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। এই দুই বিপরীত মেরুমুখী অবস্থানের সমাধান কী? বাংলাদেশের বিদেশি বন্ধুদের মুখ থেকে যে কথাটি উচ্চারিত হচ্ছে তা হলো. নির্বাচনটি হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য, ন্যায্য এবং সব পক্ষের অংশগ্রহণমূলক। তারা খোলাখুলি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলেনি। তাদের কূটনৈতিক ভাষায় চয়নকৃত বাক্যাবলীর অর্থভেদ করলে যা বোঝা যায় সেটি হলো, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন। এমনকি ভারতের অর্থমন্ত্রী শ্রী প্রণব মুখার্জিও বলেছেন, গণতন্ত্রের মূল স্পিরিট হলো দেশের জনগণ যেভাবে চায় সে পথেই চলা। মোটামুটিভাবে বলা যায়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি এখন আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। এরকম একটি প্রায় অনিষ্পন্নযোগ্য দ্বন্দ্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর একটি বিধান। এই বিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংসদের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার ৩ মাস আগে। অর্থাত্ বিদ্যমান সংসদের সদস্যরা সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন। এর ফলে একদিকে যেমন তারা নির্বাচনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশী একই দলের সংসদ সদস্য এবং অসদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখা দেবে। দেখা দেবে বিশাল বিশৃঙ্খলা। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে ফয়সালায় আসার জন্য ৩ মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। ১০ জুন সেই সময়সীমা অতিক্রান্ত হবে। এরই মধ্যে তার দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা কারারুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আপস সমঝোতা হতে হলে দমন-পীড়নমূলক অবস্থার ইতি ঘটিয়ে একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু তারও কোনো লক্ষণ নেই। সরকারের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, কূটনীতির ভাষায় যাকে বলা হয় Brinkmanship, সে পথই সরকার বেছে নিয়েছে। পুরো ব্যাপারটি উভয় পক্ষের জন্য একটি স্নায়ুশক্তির পরীক্ষার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করার এই নীতি দেশের জন্য যে মঙ্গলজনক নয়, তা বলাই বাহুল্য। এরই মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে বসেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে যদি চ্যালেঞ্জ-কাউন্টার চ্যালেঞ্জ চলতে থাকে এবং তার পাশাপাশি যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়ে তাহলে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তা থেকে কোনো পক্ষেরই রেহাই পাওয়া সহজ হবে না। কথায় বলে, নগরে যদি আগুন লাগে তাহলে দেবালয় কি রক্ষা পায়? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাহেব বলেছেন, সংলাপ না হলে যুদ্ধ হবে। তিনি হয়তো সংলাপের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই এই উক্তিটি করেছেন। আমাদের সোনার দেশে ভালোমন্দ মিশিয়ে গত ৪১ বছরে যা কিছু অর্জন, সেটা তো আমরা যুদ্ধের আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাই হতে দিতে পারি না। মানুষ যে প্রশ্ন করছে দেশে কী হবে, সেই উত্কণ্ঠার অবসান এক নিমিষেই হয়ে যেতে পারে সংলাপ শুরু হলে। রাজনীতিতে যারা ক্ষমতাবান, যাদের হাতে ক্ষমতার চাবিকাঠি তারা যদি একটু ছাড় দিয়েই সংলাপের পথ সুগম করতে পারেন, তাহলে তারা হেরে গেছেন এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। গণতান্ত্রিক দেশে বেশিরভাগ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো গৌরবের, অগৌরবের নয়। ১৯৯৬ সালে বিএনপিও সংবিধানের অজুহাত দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে চায়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদ বাতিল করে একটি নির্বাচন দিয়ে একতরফাভাবে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি পাস করেছিল বলেই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ১১৬টি আসন পেয়ে বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে অবতীর্ণ হতে পেরেছিল। কোয়ালিশন গঠনের খেলায় হেরে না গেলে তাদের পক্ষে সরকার গঠন অসম্ভব কিছু হতো না। আজ এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তা দেখে মনে হয়, শাসক আওয়ামী লীগ দলের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। একটি পথ হলো ধনুর্ভঙ্গপণ করে বিরোধী দলের দাবিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা অথবা আপসরফায় পৌঁছে নিজেদের জন্য ইতিহাসে একটি সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করা। এখন তারা কী করবে এটা তাদেরই বিবেচনার বিষয়। তবে এটুকু বুঝতে পারছি, ১৯৭১-এর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যা কিছু Predict করতে পেরেছি, এখন সেরকম কিছু করতে পারা প্রায় অসম্ভব।
লেখক : অর্থনীতিবিদ
mahbub.ullah@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন